নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে সংসদে তোপের মুখে পড়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) জাতীয় সংসদে বাণিজ্য সংগঠন বিল পাসের প্রক্রিয়ার সময় বিরোধী দলীয় সাংসদরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, ‘তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে হইচই হলো। ১৫ দিনে সিন্ডিকেট হাজার কোটি টাকা উঠিয়ে নিয়েছে। সিন্ডিকেট হলো সরকার। সরকার আর সিন্ডিকেটের মধ্যে পার্থক্য নেই।’

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক বলেন, ‘সাধারণ মানুষ ভুক্তভোগী হচ্ছে। তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কঠোরভাবে বাজার নজরদারি করতে হবে। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া সিন্ডিকেট মূল্যবৃদ্ধি করতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘বলা হয় যুদ্ধের কারণে দাম বেড়েছে। যেসব পণ্য আমদানি করা হয় সেগুলোর দাম বাড়তে পারে। যেগুলো যুদ্ধের আগে আমদানি করা হয়েছে এবং যেগুলো আমদানি হয় না- দেশি পণ্য, সেগুলোর কেন দাম বাড়বে? প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে হলেও নিত্য পণ্যের দাম কমানো হোক।’

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘সিন্ডিকেটের স্বার্থে বিলটি আনা হয়েছে। এর মাধ্যমে সিন্ডিকেটকে উৎসাহী করা হচ্ছে।’

জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘সাধারণ মানুষ এখন পুষ্টিমানের সঙ্গে আপস করতে বাধ্য হচ্ছে। শ্রীমঙ্গলে যে লেবু দুই টাকা পিস, সেটি ঢাকায় ২২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্যমন্ত্রীকে আবার যুদ্ধ করতে হবে।’

বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, ‘গ্যাসের অভাবে ঢাকায় হাহাকার চলছে। গ্যাসের দাম, তেলের দাম সব বাড়ানো হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এক্ষেত্রে কিছু উদ্যোগ সরকার নিয়েছে। কিন্তু সেখানে স্বচ্ছতার অভাব আছে।’

তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা জনপ্রতিনিধি হয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ছেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। ক্ষমতার বলয়ে থেকে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে। তারেক রহমান লন্ডন থেকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করছেন, বিএনপির কারণে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে, এসব অপ্রাসঙ্গিক কথা না বলে সরকারকে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে।’

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস‌্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘আজকে সংবাদপত্রে এসেছে তিনি (বাণিজ্যমন্ত্রী) গতকাল বাজারে গিয়েছেন এবং তিনি ২৮ টাকা কেজিতে ৫ কেজি পেঁয়াজ কিনেছেন। এখন মাননীয় মন্ত্রী যদি ঘোষণা দিয়ে একটু কাঁচা বাজার, সবজি বাজারসহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে যেতেন, মানুষও ওই বাজারে যেতে পারত এবং মন্ত্রীর মতো কম দামে জিনিস কিনতে পারত। কারণ, তিনি যতই ভ্যাট কমিয়ে মূল্য কমানোর চেষ্টা করছেন, প্রকৃতপক্ষে বাজারে পণ্যের দাম অতটা কমেনি।’

তিনি বলেন, ‘বাণিজ্যমন্ত্রী সজ্জন মানুষ। কিন্তু তিনি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। যে কারণে প্রায় সময় সিন্ডিকেট দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। মন্ত্রী একজন অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী কিন্তু কেন তিনি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না? সত্য স্বীকার করতে হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। সিন্ডিকেট করে তেলের দাম বাড়িয়ে হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি।’

গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী দেশের শীর্ষস্থানীয় সফল ব্যবসায়ী। মন্ত্রী হিসেবে তিনি কতটুকু সফল সেটা বলতে না পারলেও, বাজারে গেলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সেটি ভালোভাবে জানা যাবে। বর্তমান সরকার দাবি করে তারা ব্যবসাবান্ধব। যে সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী একজন ব্যবসায়ী, সেই সরকার জনবান্ধব নয়, ব্যবসাবান্ধব হওয়ায় স্বাভাবিক।’